নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ১৭টি দপ্তরে ইউএনওসহ দীর্ঘদিন ধরে ৯০ পদ ফাঁকা রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স এবং এর আওতায় উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পদ ফাঁকা রয়েছে ৩৯টি।
তথ্যমতে, একমাস ধরে ইউএনও, আড়াই বছর ধরে সাব-রেজিস্ট্রার, চার মাস ধরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, তিন বছর ধরে পরিসংখ্যান কর্মকর্তাসহ ৯০টি পদে জনবল সংকট রয়েছে। তবে প্রধান প্রধান কর্মকর্তার পদে ভারপ্রাপ্ত কিংবা অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে দপ্তরগুলো পরিচালিত হলেও অন্য পদে কোন জনবলই নেই। এতে একদিকে যেমন স্থবির হয়ে পরেছে উপজেলা প্রশাসনের কার্যক্রম অন্যদিকে ভোগান্তিতে পরেছেন উপজেলাবাসী।
দপ্তরগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন গত ৩ সেপ্টেম্বর বদলি হয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলায় যোগদান করেন। এরপর থেকে পদটি ফাঁকা হয়ে যায়। অবশ্য চলতি মাসের ৩ তারিখ থেকে নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম রবিন শীষ অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানাগেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ এবং এর অনুকূলে ৮টি ইউনিয়নে অবস্থিত উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মোট ১৬২টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কন্সালটেন্ট মেডিসিন, সার্জারি, অ্যানেসথেসিয়া, চক্ষু, অপথালমোলজি, ইএনটি, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিক্স, আবাসিক মেডিকেল অফিসার এবং উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনজন মেডিকেল অফিসারসহ ১৬২ পদের মোট ৩৯টি পদ ফাঁকা রয়েছে। এতে চরমভাবে চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে।
এছাড়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি হাফিজুর রহমান বাচ্চু জানান, গত আড়াই বছর ধরে এই অফিসে নিয়মিত সাব-রেজিস্ট্রার নেই। বিভিন্ন উপজেলা থেকে সাব-রেজিস্ট্রার এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এতে কখনো সপ্তাহে দুই দিন আবার কখনো সপ্তাহে একদিন করে অফিস করছেন। ফলে জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা চরম বেকায়দায় পরেছেন।
উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্র জানায়, এই দপ্তরে মোট পাঁচটি পদ রয়েছে। সেখানে উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তাসহ দুটি পদে জনবল নেই। তবে গত ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর থেকে শুধুমাত্র পরিসংখ্যান কর্মকর্তার পদে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তর সূত্র জানায়, এই দপ্তরে মোট সাতটি পদ রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ তিনটি পদে জনবল সংকট রয়েছে। তবে গত ১ জুন থেকে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এছাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরে ১০টি পদের মধ্যে একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাসহ চারটি পদে, প্রাণীসম্পদ দপ্তরে ১১টি পদের মধ্যে ভেটেরিনারি সার্জনসহ পাঁচটি পদে, এলজিইডি দপ্তরে ২১টি পদের মধ্যে ১১টি পদে, যুব উন্নয়ন দপ্তরে সাতটি পদের মধ্যে দুইটি পদে, সমবায় দপ্তরে পাঁচটি পদের মধ্যে দুইটি পদে, মহিলা বিষয়ক দপ্তরে পাঁচটি পদের মধ্যে একটি পদে,সমাজ সেবা দপ্তরে ১৪টি পদের মধ্যে ছয়টি পদে,নির্বাচন অফিসে চারটি পদের মধ্যে একটি পদে,কৃষি অফিসে ৩৮টি পদের মধ্যে ছয়টি পদে, খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরে ১২টি পদের মধ্যে তিনটি পদে, মৎস্য দপ্তরে ছয়টি পদের মধ্যে তিনটি পদে জনবল সংকট রয়েছে।
একডালা ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান আলী বলেন, ইউএনও না থাকার কারণে টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের বিলে সহি হচ্ছে না। ফলে বিলও উত্তোলন করতে পারছি না। এছাড়া এডিপির প্রকল্প টেন্ডারেও জটিলতা হচ্ছে। ফলে আমরা চরম বেকায়দায় রয়েছি। সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার কামরুল হাসান বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ের এমপওি, নিয়োগ এবং নিয়মতি মনিটরিং কার্যক্রমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
নওগাঁ জেলা রেজিস্ট্রার শরিফ উদ্দীন বলেন, জেলাজুরে মাত্র পাঁচজন সাব-রেজিস্ট্রার রয়েছে। এই পাঁচজন সাব-রেজিস্ট্রার দিয়ে পুরো ১১ উপজেলা পরিচালনা করতে হচ্ছে। আমরা জনবলের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি আশা করছি হয়তো অল্প সময়ের মধ্যেই এসমস্যা সমাধান হবে।
নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. আবুহেনা মোহাম্মদ রায়হানুজ্জামান সরকার বলেন, শুন্যপদ ফিলাপের জন্য আমরা চাহিদা পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হলেই শুন্য পদে জনবল পাবো। তখন আর জনবল সংকট থাকবেনা এবং আশা করছি দ্রুতই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা বলেন, আপাতত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নওগাঁ সদর উপজেলার ইউএনওকে। আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে সেখানে নিয়মতি একজন ইউএনওকে পদায়ন করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
টিএইচ